আপনি যদি বিদেশে যাওয়া পরিকল্পনা করে থাকেন, অবশ্যই আপনাকে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো একটি নির্দিষ্ট ভিসার জন্য আবেদন।আর এই আবেদন করার জন্য আপনাকে কি কি কাগজপত্র বা নথি সংগ্রহ করতে হবে অর্থাৎ একটি ভিসা করতে কি কি লাগে?
আর্টিকেলের ভিতরে যা থাকছে
সকল ভিসার জন্য সাধারণত যা লাগবে
যেকোনো ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক নথি ও তথ্যের প্রয়োজন হয় যা প্রতিটি আবেদনকারীর জন্য বাধ্যতা মূলক,এই তথ্যগুলো জমা দিতে হয়। অর্থাৎ ভিসা করতে কি কি লাগে? এই সাধারণ তথ্যগুলো হলো:
পাসপোর্ট এবং ছবি
- আবেদনকারীর মূল পাসপোর্টের মেয়াদ ন্যূনতম ৬ মাস বা তার বেশি সময় পর্যন্ত বৈধ থাকতে হবে।
- ভিসার সিল দেওয়ার জন্য পাসপোর্টে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকা জরুরি।
- পুরাতন কোনো পাসপোর্ট থেকে থাকে, সেই পাসপোর্ট গুলোর কপি জমা দিতে হবে
ছবি
- আপনার তোলা ছবি ৪৫x৩৫ মিমি আকারের হতে হবে।
- ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে।
উপরের ফিউচার মোতাবেক এই রকম ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ছবিটি ৬ মাসের বেশি পুরোনো হলে তা গ্রহনযোগ্য নাও হতে পারে। আর আপনি কিভাবে একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি তৈরি করে নিবেন তা জানতে নিচের আর্টিকেল-টি দেখে নিতে পারেন।
জেনে নিন : পাসপোর্ট সাইজ ছবি তৈরি করার নিয়ম
পূরণকৃত আবেদন ফর্ম জমা
আপনি অনলাইনে বা অফলাইনে যে আবেদন ফর্ম পূরণ করেছেন তা জমা দিতে হবে। আপনি যদি অনলাইনে এই কাজটি করে থাকেন তাহলে আপনি যে দেশে যাবে সেই দেশের VAC কর্তৃক অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে তা সহজেই জমা দিতে পারবেন। এটি ভিসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।এইক্ষেত্রে আপনি ফর্ম পূরণে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।এবং ফর্ম পূরণ করার সময় অবশ্যই তথ্যগুলো এনাইডি কাড এবং পাসপোর্ট এর সাথে মিল রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন।
আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ বা ব্যাংক স্টেটমেন
আপনার আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ হিসাবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জামা দিতে হবে। যার দ্বারা আপনি যে দেশে ভ্রমণ করবেন সে দেশের দূতাবাস আপনার ভ্রমণের জন্য আর্থিক সামর্থ্য আছে কি’না তা বুঝতে পারবে। তার জন্য আপনাকে গত তিন থেকে ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট যেকোনো সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে যে ব্যাংকে আপনার একাউন্ট খুলা আছে সেখান থেকে তা সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।
ব্যক্তিগত ও পেশাগত নথিপত্র
ভিসা করতে কি কি লাগে তার মধ্যে ব্যক্তিগত নথিপত্র হিসাবে আপনাকে যা যা জমা দিতে হবে;
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি।
- এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির বিলের কপি (যা ৬ মাসের বেশি পুরোনো নয়)।
সরকারি চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে
- নিয়োগকর্তা পক্ষ থেকে ছুটির অনুমোদনপত্র বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)।
- বেতন স্লিপ এবং অফিস আইডি কার্ডের কপি জমা দিতে হবে।
ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে
- হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি
- এবং কোম্পানির মেমোরেন্ডাম ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট
আপিনি এখানের মধ্যে যেকোনো একটি জমা দিলেই হবে।
শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে
- আবেদনকারীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ডের কপি
- এবং ছুটির অনুমোদনপত্র জামা দিলেই চলবে।
ভিসা করতে কি কি লাগে অথবা একটি ভিসার আবেদন করা জন্য আপনাকে কি কি কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার ভিসার ধরনের উপর। ভিসার ধরন অনুসারে ভিন্ন রকম কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে।
ভিসার ধরন অনুযায়ী অতিরিক্ত আর যে যে কাগজপত্র লাগতে পারে
আপনার ভিসার ধরন অনুসারে, উপরোক্ত সাধারণ নথিপত্র ছাড়াও আরো কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হয়। নিচে কোন ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে আরো অতিরিক্ত কি কি কাগজপত্র আপনার সংগ্রহ করতে হবে তা ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনার ভিসার আবেদন এবং ভ্রমণকে সহজ করেতে ভিসা করতে কি কি লাগে বা কি কি কাগজপত্র লাগতে পারে তা জেনে নিন।
ট্যুরিস্ট ভিসা
ট্যুরিস্ট ভিসা সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য বিনোদনমূলক ভ্রমণ বা অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে জারি করা হয়। এইক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত আর কোনো প্রকার কাগজপত্রে প্রয়োজন লাগবে না।তবে আপনি যে দেশে ভ্রমণ করবেন সে দেশ থেকে যদি কেউ আমন্ত্রণ করে থাকে সেইক্ষেত্রে আপনার কিছু অতিরিক্ত নথিপত্র জমা দিতে হবে। যেমন ;
- আপনাকে যে আমন্ত্রণ করেছে তার প্রমাণ হিসেবে আমন্ত্রণপত্র জামা দিতে হবে।
- এবং আপনাকে যদি স্থানীয় নাগরিক বা সংস্থা আমন্ত্রণ জানায়, তবে তার আমন্ত্রণপত্র এবং আমন্ত্রণকারীর পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।
শিক্ষার্থী ভিসা বা Student Visa
বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা বা অধ্যয়নের জন্য এই ভিসা প্রয়োজন হয়। তার জন্য আপনাকে যা সংগ্রহ করতে হবে।
- Admission Letter
- Confirmation of Enrolment (COE) নিশ্চিতকরণ পত্র।
- আবেদনকারীর সকল শিক্ষাগত সনদের ফটোকপি।
- এবংআবেদনকারীর পরিক্ষার মার্কশীট।
- Sponsorship বা Bank Guarantee
- শিক্ষাবৃত্তির প্রমাণপত্র (যদি থাকে)।
বিজনেস বা বিনিয়োগকারী ভিসা
সাধারণত ব্যবসায়িক কাজ, বিনিয়োগ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই ভিসা ব্যবহার করা হয়।আর বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি যে ভিসা করতে কি কি লাগে তা জানা।কেননা তাদেরকে সর্বদা ভ্রমণ করতে হয়।
আমন্ত্রণপত্র: যে দেশে আপনি ব্যবসায় বা বিনিয়োগ করেতে যাবেন সে দেশের সংস্থা বা কোম্পানির কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র, যেখানে ভ্রমণের উদ্দেশ্য বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।
ব্যবসায়িক নথি: কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স, মেমোরেন্ডাম ইনকর্পোরেশন সার্টিফিকেট ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ব্যবসায়িক নথিপত্র জমা দিতে হবে।
বিনিয়োগের প্রমাণ: বিনিয়োগকারী ভিসার জন্য বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) বা সমমানের কোনো সরকারি সংস্থার সুপারিশপত্র বা বিনিয়োগের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
মেডিকেল ভিসা
বিদেশি স্বাস্থ্যসেবা বা চিকিৎসার জন্য এই ভিসার প্রয়োজন হয়।তার জন্য আপনাকে যে যে অতিরিক্ত নথিপত্র জমা দিতে হবে তাহলো;
- ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট অর্থাৎ আপনি যে দেশে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন সেই দেশের ডাক্তার বা হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার।
- এবং আবেদনকারীর বর্তমান ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, টেস্ট রিপোর্ট এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত মূল নথিপত্র জমা দেওয়া লাগবে।
আপনার সকল নথিপত্র বা কাগজপত্র ঠিক থাকলে কিভাবে ভিসার আবেদন করবেন বা আবেদন করার ক্ষেত্রে কোন কোন ধাপ অবলম্বন করতে হবে। তা নিচে থেকে দেখে নিতে পারেন।
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপ সমূহ
ভিসা করতে কি কি লাগে তা জানার পর আপনি যদি আপনার ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সফলভাবে করে নিতে চান সেইক্ষেত্রে আপনার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা আবশ্যক;
ভিসার ধরন নির্ধারণ
প্রথমেই আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিক ভিসার ধরন নির্বাচন করুন। ভিসার ধরনের ক্ষেত্রে ভুল ধরন চিহ্নিত করলে আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
উপরে উল্লিখিত সাধারণ ও আপনার ভিসার ধরনের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট সকল নথিপত্র সংগ্রহ করুন। এবং প্রতিটি নথিপত্রের মেয়াদ বৈধ এবং ফটোকপিগুলো সুস্পষ্ট কি’না তা নিশ্চিত করুন । আর অনেক সময় আপনার সকল নথিপত্রের ইংরেজি অনুবাদ এর নোটারি করা লাগতে পারে।তার জন্য তাও সংগ্রহ করে রাখুন।
অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ
আপনি যে দেশে যাবেন সে দেশের দূতাবাস বা মনোনীত ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (VAC) ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে পারেন বা আপিনি অফলাইনেও এই কাজটি করে নিতে পারেন। আর আপনি যে ভাবেই করেন না কেন? অবশ্যই আবেদন ফর্ম পূরণ করার সময় সঠিকভাবে আপনার পাসপোর্ট, এনআইডি কাড, সার্টিফিকেট অনুসারে তা পূরণ করুন। তার জন্য আপনি ভালো ভাবে জেনে নিন ভিসা করতে কি কি লাগে?
ভিসা ফি প্রদান ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
আপনার আবেদন ফর্ম পূরণ শেষে, নির্দিষ্ট ভিসা ফি প্রদান করতে হবে। এরপর আপনি যে দেশে যাবেন সে দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে সাক্ষাৎকার বা নথি জমা দেওয়ার জন্য একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে। (এটা সবার জন্য প্রয়োজন নয়)।
ভিসা ট্র্যাকিং ও সংগ্রহ
আবেদন জমা দেওয়ার পর, আপনি সাধারণত একটি ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন যার মাধ্যমে আপনার আবেদনের স্থিতি জানতে পারবেন। ভিসা ইস্যু হয়ে গেলে আপনি ভিসা আবেদন কেন্দ্র থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।তবে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পাদনে ক্ষেত্রে সাধারণত ৭ দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
ভিসা করতে কি কি লাগে তা জেনে আপনি যদি ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফেলেন তাহলে আপনি পরবর্তীতে অবশ্যই জানতে চাইবেন আপনার আবেদন এখন কোন পর্যায় আছে? অর্থাৎ আপনি আপনার ভিসা চেক দিতে চাইবেন। এই কাজটি খুব সহজে করে নিতে নিচের আর্টিকেলটি-তে ক্লিক করে আপনার ভিসা স্ট্যাটাস চেক করে নিতে পারবেন।
জেনে নিন: সৌদি সহ অন্যান্য সকল দেশের ভিসা চেক
উপরোক্ত আর্টিকেল থেকে অবশ্যই জেনে নিতে পেরেছেন যে একটি ভিসা করতে কি কি লাগে?তাছাড়া আপনি যদি ভিসা,পাসপোর্ট, বিদেশ গমন সংক্রান্ত কোনো প্রকার তথ্য জেনে নিতে চান সেইক্ষেত্রে আমাদের ওয়েবসাইট ভিত্তিক পোস্টগুলো নিয়মিত পড়ুন।
আর আপনি যদি SSC বা HSC সংক্রান্ত সকল ধরনের ইংলিশ পিডিএফ শীট পেতে চান তাহলে আমাদের নতুন ওয়েবসাইট আজকের আর্টিকেল ভিজিট করে আপনার প্রয়োজনীয় শীট টি সংগ্রহ করে ফেলুন।