পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম এবং পাসপোর্ট সংশোধন ফি

যে কোন কারণে আপনার পাসপোর্টে যদি কোনো রকমের ভুল তথ্য চলে আসে সে ক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়টির দিকে মনোনিবেশ করতে হয় সেটি হল পাসপোর্ট সংশোধন কিভাবে করতে হবে? কিংবা পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম।

ঘরে বসে আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংশোধন করতে চান কিংবা পাসপোর্ট সংশোধন রিলেটেড সমস্ত তথ্য রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তথ্য জেনে নিতে চান তাহলে এখান থেকে সেটি জেনে নিতে পারবেন।

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি লাগে?

আপনি যদি পাসপোর্ট সংশোধন করার কাজ সম্পন্ন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে কি কি রকমের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে?

ব্যাপারটা এরকম যে আপনি কি রকমের তথ্য সংশোধন করবেন সেটার উপরে নির্ভর করবে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যের প্রকারভেদ। অর্থাৎ আপনি যদি সেনসিটিভ ডকুমেন্ট পরিবর্তন করতে চান সে ক্ষেত্রে বেশি রকমের তথ্য প্রয়োজন হবে।

এবং আপনারা যদি ভুলের পরিমাণ খুবই নগণ্য হয়ে থাকে, তাহলে এটি পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আপনাকে কম তথ্য সংগ্রহ করলে চলবে।

তবে যেকোন রকমের পাসপোর্ট সংশোধন করার ক্ষেত্রে প্রাইমারি হিসেবে আপনাকে যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হয় কিংবা যে সমস্ত তত্ত্ব নিজের আয়ত্তে রাখতে হয় সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া।

আর পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য যে সমস্ত তত্ত্বের প্রয়োজন হবে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

  • সর্বপ্রথম যে তথ্যটির প্রয়োজন হবে সেটা হলো জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র।
  • এবং আপনার যদি জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র না থেকে থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন কার্ড ব্যাবহার করার মাধ্যমে এই ধাপ পাড়ি দিতে পারেন।
  • সংশোধন আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একটি লিখিত আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে লিখিত আবেদন কপি এর প্রয়োজন হবে।
  • বিদেশে দূতাবাসে আবেদন করা হলে Permanent Resident Card/Job ID Card/Student ID Card/Driving License
  • আপনার কাছে যে পুরাতন পাসপোর্ট এর কপি রয়েছে সেই পাসপোর্ট এর কপি এবং আপনার পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে।
  • আপনি যে পাসপোর্ট পরিবর্তন করতে চান সে ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামা এর প্রয়োজন হবে।

এছাড়াও পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আরো যে সমস্ত তথ্যের প্রয়োজন হতে পারে সেগুলো হলো:

  • আবেদনের সামারি কপি।
  • আবেদন কপি।
  • পেমেন্ট স্লিপ।
  • রি ইস্যু ফরম।
  • প্রতিজ্ঞাপত্র বা কমিটমেন্ট ফরম, ইত্যাদি।

অনেক সময় এটা দেখা যেতে পারে যে পাসপোর্ট পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আপনার তথ্য-উপাত্ত ভালোভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা আপনার তথ্যগুলো তদন্ত করছে।

সে ক্ষেত্রে আপনার কাছে যদি সঠিক তথ্য থেকে থাকে, তাহলে পাসপোর্ট পরিমার্জন করার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে নেয়া সম্ভব।

পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম

আর্টিকেলের একদম শুরুতে বলা হয়েছে আপনি কি রকমের তথ্য সংশোধন করবেন সেটার উপর নির্ভর করবে আপনার পাসপোর্ট পরিমার্জনের জন্য কি রকমের কষ্ট কিংবা সময় অতিবাহিত করতে হবে।

তবে নিচে কিছু ধাপ বর্ণনা করা হলো যেগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার নির্দিষ্ট তথ্য পরিমার্জনের জন্য যেরকম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, সেই সম্পর্কিত কিছুটা ধারনা নিতে পারবেন।

পাসপোর্ট এর নামের ভুল হলে: যদি আপনার নিজ নামে কোন রকমের ভুল থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে এটি সংশোধন করতে গেলে আপনাকে কি করতে হবে?

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে নিজ নাম পিতা-মাতার নাম কিংবা স্ত্রীর নাম সংশোধন করতে গেলে প্রয়োজনীয় তথ্য হিসেবে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র, সার্টিফিকেট ( যদি থাকে), পূর্বের পাসপোর্ট, নাগরিক সনদ, পেশা প্রমানের সনদ, আবেদন কপি, পেমেন্ট স্লিপ, রি ইস্যু ফরম, প্রতিজ্ঞাপত্র বা কমিটমেন্ট ফরম সংগ্রহ করতে হবে।

এবং এই সমস্ত তত্ত্বের সমন্বয় আপনাকে লিখিত আবেদন করতে হবে, যাতে করে আপনি তথ্যটি সংশোধন করতে পারেন।

বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তিত হলে: এছাড়াও কোন কারনে আপনার বৈবাহিক অবস্থা যদি পরিবর্তিত হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে কিরকম তত্ত্বের প্রয়োজন হবে?

এবার আপনি যদি বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে তথ্য হিসেবে প্রয়োজন হবে: কাবিননামা, কোট ম্যারেজ সার্টিফিকেট, হিন্দুদের ক্ষেত্রে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন সনদ, অন্যান্য ধর্মালম্বীদের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা বৈবাহিক সনদ। 

ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে: এছাড়াও আপনি যদি কোন কারণে আপনার ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান, সে ক্ষেত্রে ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে কি রকম তথ্যের প্রয়োজন হবে?

ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য, আপনি বর্তমানে যে স্থানে অবস্থান করছেন সেই স্থানের ইউটিলিটি বিলের কপি কিংবা যে কোনো রকমের বিলের কাগজ আপনি যদি দিয়ে দেন, সেক্ষেত্রে সেটি পরিবর্তন হয়ে যাবে।

আপনার পেশা পরিবর্তিত হলে: এছাড়াও পূর্বে যদি আপনি শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন এবং বর্তমানে যদি আপনার পেশা কোন কারনে পরিবর্তিত হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সেটি পরিবর্তন করা কি সম্ভব?

পেশা কোন কারনে পরিবর্তিত হয়ে গেলে সেটা পরিবর্তন করা অবশ্যই সম্ভব হবে। তবে এটা পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং যেগুলো সমন্বয় আপনি সেটি পরিমার্জন করতে পারবেন।

আপনার পরিবর্তিত পেশা সংশোধন করার জন্য তথ্য হিসেবে যে ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে সেটা হলো: আপনি বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠান রয়েছেন সেই প্রতিষ্ঠানে থেকে আপনার চাকরির সনদ পত্র সংগ্রহ করতে হবে।

এছাড়াও ব্যাপারটা যদি এরকম হয় যে, আপনি পূর্বে চাকরি করেছেন কিন্তু বর্তমানে অবসরে চলে যাচ্ছেন সে ক্ষেত্রে আপনাকে PRL ডকুমেন্টের ফটোকপি পাসপোর্ট আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

এছাড়াও আপনি যদি আগে ছাত্র থাকেন এবং বর্তমানে কোন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করে সেটি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

আগের পাসপোর্টে ছাত্র বা অন্য পেশা দেওয়া ছিলো এখন সরকারী চাকুরী করেন এমন হলে পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় উক্ত অফিস যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে, সেখান থেকে GO / NOC নিতে হবে।

আর উপরে উল্লিখিত উপায়ে আপনি চাইলে আপনার পেশা পরিবর্তন করার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।

পাসপোর্ট সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?

খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনি যদি পাসপোর্ট সংশোধন করে নিতে চান সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য আপনাকে কত টাকা খরচ করতে হবে?

আপনি হয়তো এই সম্পর্কে অবগত আছেন যে আপনি চাইলে বিভিন্ন রকমের পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেন এবং এই বিভিন্ন রকমের পাসপোর্টের জন্য বিভিন্ন রকম খরচ এর প্রয়োজন হবে।

নিচে থেকে পাসপোর্ট সংশোধন করার খরচ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জেনে নিন।

৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট সংশোধন ফিঃ 

  •  নিয়মিতঃ ৪,০২৫ ৳ 
  • জরুরীঃ ৬,৩২৫ ৳
  • অতি জরুরীঃ ৮,৬২৫ ৳  

৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট সংশোধন ফিঃ 

  • নিয়মিতঃ ৬,৩২৫ ৳ 
  • জরুরীঃ ৮,৬২৫ ৳
  • অতি জরুরীঃ ১২,০৭৫ ৳ 

১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট সংশোধন ফিঃ 

  • নিয়মিতঃ ৫,৭৫০ ৳ 
  • জরুরীঃ ৮,০৫০ ৳
  • অতি জরুরীঃ ১০,৩৫০ ৳  

১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট সংশোধন ফিঃ 

  • নিয়মিতঃ ৮,০৫০ ৳ 
  • জরুরীঃ ১০,৩৫০ ৳
  • অতি জরুরীঃ ১৩,৮০০ ৳  

বিভিন্ন রকমের পাসপোর্ট আবেদনের সংশোধন করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিরকম এর খরচ সেই সংক্রান্ত তথ্য উপরে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

পাসপোর্ট সংশোধন এরপরে ডেলিভারি পেতে কতদিন লাগবে?

আপনার পাসপোর্ট আবেদনের ধরন অনুযায়ী আপনার ডেলিভারি ডেট পরিবর্তিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি কি রকমের পাসপোর্ট আবেদন করছেন সেটির উপর নির্ভর করবে আপনি কখন পাসপোর্ট সংশোধনের ডেলিভারি পাবেন।

তবে সংক্ষেপে এটা বলা যায় যে, সরকারী নিয়ম অনুসারে নিয়মিত পাসপোর্ট ২১ কর্ম দিবসে, জরুরী পাসপোর্ট ৭ কর্ম দিবসে এবং অতি জরুরী পাসপোর্ট ৩ কর্ম দিবসে ডেলিভারি দেওয়া হয়। 

2 thoughts on “পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম এবং পাসপোর্ট সংশোধন ফি”

  1. আকাশ আহমেদ ফারুক

    আমি অসাধু দালালের খপ্পরে পড়ে আমার নিজের নামে একটি এমআরপি পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও দালাল আমাকে অন্য একটি নাম দিয়ে আরেকটি এমআরপি পাসপোর্ট করে দেয় সে পাসপোর্ট দিয়ে আমি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়াতে বসবাস করি পরবর্তীতে দেশে এসে আমার নিজ নামে একটি ই পাসপোর্ট এর আবেদন করি সেটি আটকে যায় পরবর্তীতে আমি এডি সাহেবের কাছে অনেকবার যাওয়ার পরে সেটি পুলিশ তদন্তে পাঠায় তদন্ত রিপোর্ট আমার পক্ষে আসে পরবর্তীতে সহকারি পরিচালক পাসপোর্ট অফিস আমার তথ্য গোপন করা পাসপোর্টটি পাসপোর্ট অধিদপ্তর হেড অফিস ডিলিট করার একটি চিঠি আমি দীর্ঘদিন যাবত এই পাসপোর্ট এর বিষয়টি নিয়ে অনেক ভোগান্তিতে আছি আমি এখন কিভাবে আমার নিজ নামের পাসপোর্টটা ডেলিভারি পাবো সেই জন্য আপনাদের কাছে আকুল আবেদন

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four − two =

Scroll to Top